কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সাংবাদিককে দেখে নেয়ার হুমকি ছাত্রলীগের সভাপতির

কুবি প্রতিনিধি।।

প্রকাশিত সংবাদের জের ধরে দৈনিক আজকের পত্রিকার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সাজ্জাদ বাসার কে হল থেকে বের করা ও দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের চার বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ।

এছাড়া আরটিভি অনলাইনের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সাফায়িত সিফাতকে ‘হ্যাডম’ দেখাবেন বলে শাসিয়েছেন। সাজ্জাদ বাসার ও সাফায়িত সিফাত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

রবিবার (২৪ জুলাই) রাত ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তিনি সব হল থেকে প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকদের নামিয়ে দেবেন বলে হুমকি দেন। তার সাথে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল বাশার সাকিবকে বঙ্গবন্ধু হল থেকে সংবাদকর্মীদের নামিয়ে দিতে আদেশও দেন।

এ সময় তার সাথে থেকে দুই সাংবাদিককে শাসান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল ইসলাম মাজেদ, কাজী নজরুল ইসলাম হলের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) নাজমুল হাসান পলাশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) খায়রুল বাসার সাকিবসহ আরও কয়েকজন। সংবাদকর্মী সাজ্জাদ বাসারের বাবাকে নিয়েও অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস ও সম্পাদক মাজেদ। 

এদিকে, এই ঘটনায় ২৫ জুলাই (সোমবার) ভুক্তভোগী দুই সাংবাদিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। সর্বশেষ, সাজ্জাদ বাসার ও সাফায়িত সিফাত থানায় জিডির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। 

সাজ্জাদ বাসার ও সাফায়িত সিফাত জানান, তারা রাতের খাবার শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে কথা বলছিলেন। এ সময় তাদের ডেকে নিয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। দুই সংবাদকর্মীর অভিযোগ, কথাবার্তার একপর্যায়ে ইলিয়াস ও মাজেদ তাদের করা সংবাদের প্রসঙ্গ তুলে এবং উত্তেজিত হয়ে যায়।

বিশ্বববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ সাজ্জাদ ও সিফাতকে বলেন, ‘ভেবেছিস তোদের হ্যাডম আছে তাই যা ইচ্ছে লিখে ফেলছস। এবার দেখবি আমাদের কি হ্যাডম।’ 

তারা আরও জানান, ইলিয়াসকে প্রকাশিত সংবাদের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য থাকলে প্রতিবাদ দেয়ার কথা বলা হলেও তিনি ক্রমেই আরও আক্রমণাত্বক হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তিনি প্রেসক্লাবে যুক্ত থাকা সাংবাদিকদের হলে থাকতে দেবেন না বলে ঘোষণা দেন।

সাজ্জাদ বাসার বলেন, ‘ইলিয়াস ভাই আমাকে দেখিয়ে তার সাথে থাকা বঙ্গবন্ধু হলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক খায়রুল বাসার সাকিবকে আমি ও অন্যান্য সাংবাদিকদের কালই হল থেকে বের করে দেয়ার আদেশ দেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘যা সত্য আমরা তা নিয়েই সংবাদে লিখে থাকি। এরকম হুমকি প্রমাণ করে সাংবাদিকতায় আমরা ঠিক পথেই আগাচ্ছি। তবে, এই হুমকি গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে। আমি অনিরাপদ বোধ করছি। আমি প্রশাসনের কাছে এর সুষ্ঠ বিচার চাই।’ 

এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাফায়িত সিফাত বলেন, ‘আমি সাংবাদিকতা চর্চা করি। বিভিন্ন বিষয়ে সংবাদ করতে হয়। কিছু বিষয় কারো পক্ষে যাবে, কারো বিপক্ষে। আমি ঘটনার সময় ইলিয়াস ভাইকে বলেছিলামও যদি কোন কিছু ভুল মনে হয় তাহলে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ দেয়ার জন্য। কিন্তু তিনি যা করলেন তা ন‍্যাক্কারজনক। আমি এর বিচার চাই।’ দুই সংবাদকর্মী শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতির এমন নগ্ন হুমকি স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য চরম উদ্বেগের। পাশাপাশি তিনি যেভাবে সরাসরি হল থেকে নামিয়ে দেয়ার হুমকি দিলেন তাতে এটি স্পষ্ট করলেন যে ক্যাম্পাসে ও হলে তিনি প্রশাসনকে ডিঙিয়ে তার ভয়ের রাজনীতি তৈরি করেছেন। 

হুমকি প্রদানের ব্যাপারে কুবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘কোনো হুমকি দেয়ার ঘটনা ঘটে নাই। আমরা দুইজনের সাথে শুধু কিছু কথা বলেছি।  হল থেকে নামিয়ে দেয়ার হুমকি প্রসঙ্গে বলেন, ‘আওয়ামীলীগ এখন ক্ষমতায় আছে তাদের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ নিয়ে লিখবে আর ছাত্রলীগ কিছু করবে না। এটা হতে পারে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগেরই তো মেয়াদ নেই সেখানে আমাদের মেয়াদ নিয়ে প্রশ্ন আসে কেন? তোমরা যাদের বক্তব্যে নিউজ দাও তাদের মেয়াদ তখন কই থাকে? আওয়ামী লীগের সম্মেলনও তো অনেক আগে হয়েছে। সেই হিসাবে তো শেখ হাসিনাও মেয়াদোত্তীর্ণ।’

এ ব্যাপারে কুবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ বলেন, ‘আমি ছোট ভাইয়ের মতো বিষয়টা বলেছি। সাংগঠনিক জায়গা থেকে বলি নাই।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি অভিযোগপত্র পেয়েছি। প্রক্টরিয়াল বডি আমরা সবাই বসে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।’

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৬ মে ইলিয়াস হোসেন সবুজকে সভাপতি ও রেজাউল ইসলাম মাজেদকে সাধারণ সম্পাদক করে কুবি শাখা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটিকে এক বছরের জন্য অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। পরবর্তীতে একই বছরের ২২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়।
ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ, ক্যাডারবাহিনী তৈরি করে ভিন্নমতের অনুসারীদের হল থেকে বিতাড়িত করা, টেন্ডার পাইয়ে দেয়ার মাধ্যমে কমিশন নেয়া, নিয়োগবাণিজ্য, প্রশাসনকে চাপে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ হত্যা মামলার আসামিদের বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরিপ্রদানসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
error: ধন্যবাদ!